কৈলাশ অর্থ শিব লোক বা শিবের বাসস্থান রুপে বর্ণিত হিমাচলের উত্তরস্থ পর্বত বিশেষ।
কৈলাস পর্বত এর অবস্থানঃ
তিব্বতের পশ্চিম পাশে, গ্যাংডিস পর্বত শ্রেনীর বুকে পিরামিডের মতন দাঁড়িয়ে আছে কৈলাস পর্বত। গ্রানাইট ও চুনাপাথরের তৈরি যে পর্বতের পাদদেশে বয়ে গেছে রাক্ষসতাল হ্রদ ও মানস সরোবর।
হিন্দু ধর্মীয় পুরানে কৈলাশ পর্বতকে শিবের “লীলাধাম” বা আবাসস্থল বলা হয়। তাদের মতে সেখানে দেবতা যমদূত থাকে। অনেকে হিন্দুদের মতে শিব ও তার সহধর্মিনী দূর্গা এবং কার্তিক-গনেশ ও শিবের অনুসারিরা কৈলাশে বাস করেন। কালো পাথরের এই পাহাড়কে প্রাচিন কাল থেকেই পৃথিবীর স্তম্ভ মনে করা হয়। সমতল থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২২ হাজার ফুট ।
কৈলাশ এমনি এক পাহাড় যেখানে এখনো কোন মানুষের পা পড়েনি, যদিও কৈলাশ পর্বত এভারেস্ট থেকে অনেক নিচু পাহাড় তবুও কোন পর্বত আরোহী এখনো কৈলাশে আরোহণ করতে পারে নাই। এভারেস্ট পর্বতের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার এর মতন হলেও এর চুড়ায় পর্বত আরোহীদের পা পরেছে ঠিকই, কিন্তু এভারেস্টের চেয়ে কম উচ্চতাসম্পন্ন পর্বত কৈলাশে এখনো অব্দি কেউ উঠতে পারেনি। কৈলাশ পর্বতের উচ্চতা মাত্র ৬ হাজার ৬৩৮ মিটার। এভারেস্ট থেকে ২০০০ মিটার ছোট হওয়া সত্বে ও এখন পর্যন্ত কোন পর্বত আরোহী কৈলাশ এর চুড়ায় ওঠতে সক্ষম হয়নি। তবে পর্বত আরোহীরা কেন কৈলাশে উঠতে সক্ষম হয়নি তার রহস্য আজও রহস্যই রয়ে গেছে। এখনো এই রহস্যের কোন সমাধান মেলেনি। কৈলাশ পর্বত তাই এখন পর্যন্ত মানুষের কাছে রহস্যময় অজানাই রয়ে গেল। প্রাকৃতিক এক বিস্ময় লুকিয়ে আছে কৈলাশ পর্বতের মাঝে। কৈলাশ হিন্দু ধর্মের তীর্থস্থান বলা হয়ে থাকে।
তবে যারা কৈলাশে পর্বত আরোহী হয়ে অঠার জন্য চেষ্টা করেছেন তাদের বর্ণনা মতে আজব সব কান্ড ঘটে কৈলাশ এ ওঠার পথে। কিছুদূর উঠার পরই প্রকৃতি তার ভয়াবহ রুপ দেখাতে শুরু করে। প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়, বড় পাথরের টুকরো তেড়ে আসে, হঠাৎ করে পা পিছলে পড়ে যায়। শান্ত প্রকৃতি তার আশান্ত ভৌতিক রুপ ধারন করে। এ পর্যন্ত যারা কৈলাশ পর্বতে আরোহণ করেছে, কৈলাশের চূড়ায় ঊঠার চেষ্টা করেছে সবার সাথেই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। অনেকের বর্নণা মতে প্রায় সময়ে শরীরের পরিবর্তন ঘটে দ্রুত, শরীরের চুল,হাত-পায়ের নখ স্বাভাবিকআযে হারে বাড়ে ,কৈলাশে ১২ ঘণ্টা থাকলে নাকি তার দ্বিগুন পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। কিছুদূর ওঠার পরই শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অনেক সময় শরীরে অকালবার্ধক্য চলে আসে। দিনের বিভিন্ন সময়ে নাকি কৈলাশের রং পালটে যায়। সেই সাথে বদলে যায় কৈলাশের ভূ-প্রকৃতি। এই রকম হাজারো বিস্ময়ের ধারক ও বাহক হয়ে রহস্যময় ভাবে দাঁড়িয়ে আছে কৈলাশ পর্বত। যদিও এই বিস্ময়েরকোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি।
কৈলাশ পর্বতের চূড়ায় কোন বরফ জমে না। কৈলাশ পর্বত স্বাভাবিকের তূলনায় অনেক খাড়া হওয়াতে এর চূড়ায় কোন বরফ জমে থাকতে পারে না, নিচে পরে যায়। সেই বরফ গলে নদী গুলোর উৎপত্তি হয়। খরখড়ে মরুভূমির মত স্থানে শ্বেত – শুভ্র পর্বত কৈলাশ দাঁড়িয়ে আছে। কৈলাশকে হিমালয়ের প্রথম ও প্রধান রেঞ্জ পর্বত ও বলা হয়।
যদিও এখনো কৈলাশের চূড়ায় কেউ ওঠেনি, তবে কৈলাশের ৫০ কিলোমিটার ট্রাকিং এড়িয়ায় লাখ লাখ তীর্থযাত্রী হাজার হাজার বছর ধরে কৈলাশ পর্বতের আশপাশে ঘুরছে সুখী হওয়ার আশায়। অনেকেই আবার প্রনাম জানিয়ে যাচ্ছে।
তবে কোথাও কোথাও জানা যায় , তিব্বতের প্রচলিত প্রাচিন কিংবদন্তি গুরু মিলারেপাই শুধু পা রাখতে পেরেছিলেন কৈলাসের চূড়ায়। ফিরে এসে তিনি সবাইকে নিষেধ করেছিলেন কৈলাস জয়ে যেতে। কারণ হিসাবে তিনি বলেন যে একমাত্র সেই মানুষ এই পাহাড়ের চুড়ায় যেতে পারবে যার গায়ে চামড়া নেই। আধুনিক পর্বত আরোহীরা ও বলেছেন কৈলাস পর্বত জয় করা অসম্ভব। তবে এর কারণ আজও অজানা।
রহস্যকে আরো গভীর করে তোলে কৈলাশের গায়ে বরফ ও পাথরের মেলবন্ধন তৈরি হওয়া স্বস্তিকা ও ওঁ চিহ্ন। গুগল আর্থের মাধ্যমে তোলা ছবির মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। যে খানে দেখা যায় কৈলাশের বিশেষ কোন জায়গায় আলো-ছায়া মিলে সৃস্টি করে হাস্যরত শিবের মুখাবয়ব।
যারা কৈলাশের আরোহণ করতে চেয়েছেন তাদের সাথে কি ঘটেছেঃ
যারা কৈলাসে আরোহণ করতে চেয়েছে তাদের অনেকের সাথে অনেক ধরনের ঘটনা ঘটেছে। অনেককেই দেখা গেছে পর্বতের চূড়ার কাছাকাছি ছুটে গেছে। কিন্তু তাদের মাঝে কেউ ফিরে আসতে পারেনি। তাঁরা কারা ছিল বা তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জানা যায়নি। দুইজন প্রখ্যাত পর্বত আরোহী রটালেজ ও উইলসন বলেন, একেবারে কাছ থেকে কৈলাশ দেখে মগ্ধ হয়ে রটালেজ ও উইলসন সিদ্ধান্ত নেন কৈলাশের চূড়ায় ঊঠার। অভিযানের জন্য বেছে নিয়েছেন অভিজ্ঞ শেরপা সেঁতানকে । বেছে নিয়েছিলন কৈলাশ শৃঙ্গে উঠার নতুন পথ। রটালেজ বিশেষ কাজে ফিরত আজলেও ঊইলসন ও শেরপা সেতান প্রস্তুতি নেন। এক রোদ উজ্জল ঝলমলে সকালে কৈলাস পর্বতের উত্তর-পূর্ব দিয়ে গিরিশিরা দিয়ে শিখরের দিকে এগিয়ে চলে তাঁরা। পৌছে ও গিয়েছিলেন গিরিশিরিটার মাঝখানে। কিন্তু গিরিশিরিটির মাঝে অবস্থিত বড় বোল্ডারের কাছে পৌছানোর পর পরই বদলে যায় আবহাওয়া। ঘন অন্ধকার ঘিরে ফেলে কর্নেল উইলসন ও শেরপা সেতারকে। এই দুই পর্বত আরোহীর উপর উত্তাল বাতাস বাজপাখির মতন তাদের ঊপর ঝাপিয়ে পড়ে। বাতাসের ঝপটায় কয়েকশ ফিট নিচে ছিটকে পড়ার উপক্রম হয় এই দুই পর্বত আরোহীর। পরিস্থিতি সামলে তাঁরা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলেন পর্বতের চূড়ায় উঠার। কিন্তু সম্ভব হয়নি, সেই বিশেষ বোল্ডারটির সামনে আসতেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কখনো প্রবল তুষারপাত, কখনো ঘন কালো মেঘ, কখনো প্রবল বাতাসের বাঁধার উপস্থিতিতে ফিরে আসতে হয়েছে তাদের। রহস্যময় এই জায়গাটা পারি দেবার সকল চেষ্টা বিফলে গেছে। বাধ্য হয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে ভারতে ফিরে আসেন উইলসন। এভাবেই এখন পর্যন্ত কৈলাশ পর্বত মানুষের কাছে আজও রহস্যময় রয়ে গেছে।
মোঃ শওকত আলী
স্বপ্নবাজ বিডি ট্রাভেলস (ফাউন্ডার এডমিন)
কৈলাশ নিয়ে এমন হাজারো রহস্য এখনো জট খুলেনি
ReplyDeleteকৈলাশ পর্বত এর কথা আজকে জানলাম
ReplyDeleteকৈলাশ পর্বত সমন্ধে জানতাম না
ReplyDeleteকৈলাশ পর্বত সমন্ধে পূর্বে জানতাম না
ReplyDeleteকৈলাশ পর্বত সমন্ধে এতদিন জানতাম না
ReplyDeleteরহস্যময় কৈলাশ
ReplyDelete